যে কারণে ছড়াতে পারে করোনার সংক্রমণ

 বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যেসব কারণে বাড়তে পারে, তা বিশ্লেষণ করলে বেশ কিছু সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা প্রতিফলিত হয়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও, নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব এবং জনসচেতনতার অভাবের কারণে বাংলাদেশে এই সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে। এই সংক্রমণ বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা জরুরি।


প্রথমত, জনসচেতনতার অভাব একটি বড় কারণ। বাংলাদেশের বহু মানুষ এখনও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না বা তা গুরুত্ব সহকারে মেনে চলে না। অনেকেই মাস্ক পরিধান করেন না, হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখেন না কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন না। গণপরিবহন, বাজার, ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠান—এই সব জায়গায় মানুষ একসাথে জমায়েত হন, যা সংক্রমণের হার বাড়াতে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ঈদ বা পূজার মতো বড় উৎসবের সময় মানুষ শপিংমল বা বাজারে ভিড় করেন, এবং সেসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি একপ্রকার উপেক্ষিত হয়।


দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত ও কার্যকর মনিটরিংয়ের অভাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে। অনেক সময় সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র ধরা পড়ে না কারণ পর্যাপ্ত টেস্ট করা হয় না। টেস্টের সক্ষমতা ও প্রাপ্যতা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এখনও অনেক জায়গায় সীমিত। কেউ কেউ উপসর্গ থাকলেও টেস্ট না করে ঘরেই থেকে যান অথবা সামাজিক কারণে বিষয়টি গোপন রাখেন। ফলে তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্যদের সংক্রমিত করেন।


তৃতীয়ত, নতুন ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত বিস্তার একটি অন্যতম চিন্তার বিষয়। করোনাভাইরাস একটি RNA ভাইরাস হওয়ায় এটি সহজেই পরিবর্তিত হয়ে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করতে পারে। এসব ভ্যারিয়েন্ট পূর্ববর্তী সংক্রমণের বিরুদ্ধে গঠিত প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে পারে, এমনকি টিকার কার্যকারিতাও অনেক সময় কমিয়ে দিতে পারে। বর্তমানে কিছু ভ্যারিয়েন্ট যেমন XBB, BA.5 প্রভৃতি অনেক বেশি সংক্রামক এবং তাদের শনাক্তে সাধারণ টেস্ট পদ্ধতি কখনও কখনও অকার্যকর হয়ে পড়ে।


চতুর্থত, টিকা নেওয়ার অনীহা বা অসম্পূর্ণ টিকাদান প্রক্রিয়াও সংক্রমণ বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। যদিও বাংলাদেশে ব্যাপকহারে টিকাদান কর্মসূচি চালানো হয়েছে, তথাপি অনেকেই এখনও দ্বিতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ নেননি। কিছু মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাস, গুজব, বা ভুল তথ্যের কারণে টিকা নিতে ভয় পান। টিকার অপ্রতুলতা বা দূরবর্তী অঞ্চলে টিকাকেন্দ্রে পৌঁছানোর সমস্যা এই অনীহাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।


পঞ্চমত, শহরাঞ্চলের অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও ঘনবসতি সংক্রমণ বৃদ্ধির আরেকটি প্রধান কারণ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জের মতো জায়গাগুলোতে মানুষের ঘনত্ব এত বেশি যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব। বস্তি এলাকায় বসবাসরত মানুষজন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, ছোট জায়গায় গাদাগাদি করে বসবাস করেন, যেখানে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া এসব জায়গায় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কঠিন হওয়ায় আক্রান্ত হলেও অনেকে চিকিৎসার সুযোগ পান না।


ষষ্ঠত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস খোলার পরে মনিটরিং কমে যাওয়া সংক্রমণের জন্য একটি বড় ঝুঁকি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরে সেখানে শিশু-কিশোরদের মাধ্যমে ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে, যেহেতু তারা অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারে না। একইভাবে বিভিন্ন অফিস ও কারখানায় কর্মীদের উপস্থিতি বাড়ায় ওয়ার্কপ্লেসে সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।


সপ্তমত, মোবাইল জনগোষ্ঠী বা অভিবাসী শ্রমিকদের চলাচল সংক্রমণ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় কাজের জন্য মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করেন। এই চলাচল সংক্রমণকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে দিতে সহায়ক। আন্তর্জাতিক অভিবাসী শ্রমিক যারা বিদেশ থেকে ফিরে আসেন, তাদের মধ্যেও অনেক সময় সংক্রমণ ধরা পড়ে, কিন্তু সঠিকভাবে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা না থাকায় তারা সমাজে ফিরে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারেন।


অষ্টমত, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও জরুরি প্রস্তুতির ঘাটতি পরিস্থিতি মোকাবিলাকে দুর্বল করে তোলে। হাসপাতালগুলোর ICU, অক্সিজেন সরবরাহ, বিশেষায়িত চিকিৎসক ও নার্স সংকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতিমারি চলাকালীন সময়ে দেখা গেছে, সংক্রমণ বেড়ে গেলে হাসপাতালে জায়গার সংকট দেখা দেয় এবং অনেক রোগী সঠিক চিকিৎসা পান না। এর পাশাপাশি, সরকারি উদ্যোগ এবং বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ের অভাবও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।


নবমত, মিথ্যা তথ্য ও গুজবের প্রসার জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো গুজবে বিশ্বাস করে কার্যকর প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। “করোনা সাধারণ সর্দি-জ্বর মাত্র” বা “টিকা নিলে বন্ধ্যাত্ব হয়” এমন ভুল তথ্য মানুষের মধ্যে ভয় বা উদাসীনতা তৈরি করে, যা তাদের সঠিক আচরণ থেকে দূরে রাখে।


দশমত, রাজনৈতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই করা হয়। মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ, বিয়ের অনুষ্ঠান, বা কুলখানির মতো বড় জমায়েতগুলোতে অংশগ্রহণকারীরা অনায়াসে একে অপরকে সংক্রমিত করতে পারেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।


পরিশেষে, বলা যায় যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার পেছনে শুধু ব্যক্তিগত অসাবধানতা নয়, বরং সমষ্টিগত অব্যবস্থাপনা, অবহেলা ও সচেতনতার অভাবও দায়ী। সরকার ও সাধারণ জনগণ—উভয়ের দায়িত্ব হলো সঠিক তথ্য, কার্যকর পদক্ষেপ ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, শিক্ষিত ও দায়িত্ববান জনগোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই ধরনের অতিমারি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে যদি এসব বিষয়ে উদাসীনতা বজায় থাকে, তাহলে খুব সহজেই বাংলাদেশে আবারও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। তাই এখনই সময়, সচেতন ও প্রস্তুত হওয়ার।

HIV ভাইরাসের লক্ষন ও প্রতিকার:

এইচআইভি ভাইরাসের লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়ে ১২০০ শব্দের বিশ্লেষণধর্মী প্যারাগ্রাফ


এইচআইভি (HIV) বা হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয়। এই ভাইরাসের সংক্রমণ untreated অবস্থায় থেকে গেলে তা AIDS (Acquired Immunodeficiency Syndrome)-এ রূপ নেয়। এইডস হলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, সাধারণ সংক্রমণ বা রোগও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এইচআইভি বর্তমানে একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও সঠিক প্রতিরোধ, সচেতনতা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এই ভাইরাসের লক্ষণ, সংক্রমণের উপায়, চিকিৎসা ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলে এই বিষয়ে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।


প্রথমেই লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা যাক। এইচআইভি সংক্রমণের লক্ষণগুলো বিভিন্ন ধাপে প্রকাশ পায়। সাধারণত সংক্রমণের পরপরই কেউ বুঝতে পারেন না যে তিনি এইচআইভি পজিটিভ। সংক্রমণের প্রথম ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ফ্লু-সদৃশ উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একে Acute HIV Infection ধাপ বলা হয়। এই পর্যায়ে রোগীর শরীরে জ্বর, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, ত্বকে ফুসকুড়ি, ক্লান্তি এবং মাঝে মাঝে ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। তবে এই উপসর্গগুলো সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণের মতো মনে হওয়ায় অনেকেই এ নিয়ে গুরুত্ব দেন না।


এরপর আসে Clinical Latency Stage, যেটি Asymptomatic HIV Infection নামেও পরিচিত। এই পর্যায়ে ভাইরাস শরীরে সক্রিয় থাকলেও এর তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। এই সময়টি কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে ভাইরাস কার্যক্রম বন্ধ আছে। এটি ধীরে ধীরে শরীরের T-helper কোষ বা CD4 কোষ ধ্বংস করতে থাকে। একসময় যখন CD4 কোষের সংখ্যা একেবারে কমে যায়, তখন রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এত দুর্বল হয়ে পড়ে যে সে AIDS পর্যায়ে পৌঁছে যায়।


এইডস পর্যায়ে উপসর্গ অনেক বেশি জটিল ও স্পষ্ট হয়। রোগীর ওজন হ্রাস পায়, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, অতিরিক্ত ঘাম (বিশেষত রাতের বেলা), লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া, ত্বকে বা মুখে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, এবং মাঝে মাঝে স্মৃতিভ্রংশ বা মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার বা অন্যান্য সংক্রমণ (যেমন টিউবারকুলোসিস, সাইটোমেগালোভাইরাস, হেপাটাইটিস বি/সি) দেখা যায়, যেগুলো সাধারণত সুস্থ মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়, কিন্তু এইডস আক্রান্তদের জন্য মারাত্মক হতে পারে।


এইচআইভি সংক্রমণের প্রধান মাধ্যমগুলো হচ্ছে—

১. অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, বিশেষ করে কনডম ছাড়া যৌনমিলন।

২. এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির রক্ত বা রক্তদ্রব্য শরীরে প্রবেশ করা।

৩. সংক্রমিত সুচ, সিরিঞ্জ বা অন্য কোনো ধারালো জিনিস ব্যবহার করা।

৪. মা থেকে সন্তানকে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন অথবা স্তন্যদানকালীন সময়ে।

৫. অঙ্গপ্রতিস্থাপনের সময় যদি দাতা সংক্রমিত হন।


যদিও এইচআইভি অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি ভাইরাস, তবে এটি স্পর্শ, কোলাকুলি, হাঁচি-কাশি, খাবার ভাগাভাগি, পানির গ্লাস ব্যবহার, টয়লেট শেয়ার করার মাধ্যমে ছড়ায় না। এই বিষয়টি নিয়ে সমাজে প্রচুর ভুল ধারণা রয়েছে, যা এইচআইভি আক্রান্ত মানুষদের সামাজিকভাবে বঞ্চনার দিকে ঠেলে দেয়। তাই এই ভাইরাস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


চিকিৎসার ক্ষেত্রে, এখনো পর্যন্ত এইচআইভি বা এইডস সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য নয়। তবে Antiretroviral Therapy (ART) নামক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এই ভাইরাসকে শরীরের ভেতরে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ART এমন একধরনের ওষুধ যা ভাইরাসের সংখ্যাকে খুব কমিয়ে ফেলে এবং রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে একজন এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি অনেক বছর পর্যন্ত সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। এমনকি তার শরীর থেকে অন্য কারো শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেকাংশে হ্রাস পায়।


ART-এর পাশাপাশি কিছু সহায়ক চিকিৎসা দেওয়া হয়, যেমন—ইমিউন বুস্টার, সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক, পুষ্টিকর খাবার, মানসিক পরামর্শ ইত্যাদি। এছাড়াও যদি কোনো সহ-সংক্রমণ (co-infection) যেমন টিবি, হেপাটাইটিস বা ক্যান্সার ধরা পড়ে, সেগুলোর জন্য আলাদা চিকিৎসা দরকার হয়।


এই ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন—

১. যৌন সচেতনতা বাড়ানো এবং সবসময় সুরক্ষিত যৌনমিলন নিশ্চিত করা।

২. নিয়মিত স্ক্রিনিং বা টেস্ট করা, বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

৩. টিকা: যদিও HIV-এর জন্য নির্দিষ্ট টিকা এখনো নেই, তবে HPV ও হেপাটাইটিস B-এর মতো সহ-রোগ প্রতিরোধে টিকা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

৪. PREP (Pre-Exposure Prophylaxis) ও PEP (Post-Exposure Prophylaxis) নামক ওষুধ সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়।

৫. রক্ত ও অঙ্গদানের আগে বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং।

৬. গর্ভবতী মায়েদের HIV পরীক্ষা ও সংক্রমণ রোধে চিকিৎসা নিশ্চিত করা।


এছাড়া, সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষা এইচআইভি প্রতিরোধে অপরিহার্য। আমাদের সমাজে এখনো এইচআইভি নিয়ে প্রচুর কুসংস্কার, ভয় ও গুজব বিদ্যমান। অনেকেই মনে করেন এই ভাইরাস ‘অসাধু’ বা ‘পাপী’ মানুষের রোগ, যা একদম ভুল ধারণা। এই ধরনের চিন্তাধারা আক্রান্তদের মূলধারার জীবন থেকে দূরে ঠেলে দেয়, যার ফলে তারা চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হন। তাই এইচআইভি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা, সচেতনতা মূলক কর্মসূচি, স্কুল-কলেজে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গণমাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রচার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।


এইচআইভি আক্রান্তরা যেন সমাজে বৈষম্যের শিকার না হন, সেজন্য আইনগত সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তা দেওয়া জরুরি। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করে আক্রান্তদের চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।


সার্বিকভাবে দেখা যায়, HIV এখন আর মৃত্যুর রায় নয়—বরং এটি একটি নিয়ন্ত্রিত, দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা উপযোগী ভাইরাসজনিত রোগ। সঠিক জ্ঞান, নিয়মিত চিকিৎসা, সামাজিক সহানুভূতি ও প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তার মাধ্যমে HIV সংক্রমণ রোধ এবং আক্রান্তদের মানসম্মত জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব। ভবিষ্যতে টিকার উদ্ভাবন এবং জিন থেরাপির মতো উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে হয়তো একদিন এই ভাইরাসকে চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব হবে। ততদিন পর্যন্ত, সচেতনতা, সহানুভূতি এবং বিজ্ঞাননির্ভর আচরণই এইচআইভির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।


---

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post